তামিমের অভাবটা মেটাতেই পারছে না

বিশ্বকাপে কেন ব্যর্থ বাংলাদেশ? সাকিব বাহিনীর অবস্থা এত খারাপ কী কারণে? অনেক বোদ্ধা, বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক ব্যাখ্যাই দিচ্ছেন।

দল গঠন, টাইগারদের দেশ ত্যাগের আগে ও ভারতের মাটিতে যাওয়ার পরের অনেক ঘটনাই উঠে আসছে। শেষ মুহূর্তে দল থেকে অভিজ্ঞ ও সফল ওপেনার তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে জোরেসোরে।

অধিনায়ক সাকিবের লাগামছাড়া আচরণ, হেড কোচ হাথুরুসিংহের স্বেচ্ছাচারিতা আর নির্বাচকদের অদূরদর্শিতা নিয়ে রাজ্যের কথাবার্তা চারিদিকে।

এ চরম ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকেই অনেক কারণ খুঁজে বের করেছেন। তবে আমার চোখে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশি খারাপ হওয়ার প্রথম ও প্রধান কারণ হলো, ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ‘ক্লিক’ না করা। বিশেষ করে টপঅর্ডারের রান না পাওয়া।
আমার চোখে তামিমের অভাবটাই দলের পুরো ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। টপঅর্ডার ব্যাটিং হয়েছে দুর্বল। দুই ওপেনার লিটন দাস আর তানজিদ তামিমের কেউই তামিম ইকবালের অভাব কিছুতেই পূরণ করতে পারেননি।

দেশের হয়ে শেষ ৪ বিশ্বকাপ খেলা এ অভিজ্ঞ ও সফল ওপেনারকে ফিটনেসের দোহাই দিয়ে বাইরে রেখে তরুণ ও আনকোরা তানজিদ হাসান তামিমকে নেওয়া হয়েছে। এ তরুণ বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সফল হতে পারেননি।
প্রতি ম্যাচেই ওপেনিং সমস্যায় জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ। ৭ ম্যাচে একবার শুধু দুই ওপেনার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ভারতের বিপক্ষে। ঐ খেলায় তানজিদ তামিম আর লিটন দাস মিলে প্রথম উইকেটে দলকে উপহার দিয়েছেন ৯৩ রান। আর ওই ম্যাচেই বাংলাদেশ আড়াইশ পেরিয়ে (২৫৬) গেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে ওই একবারই বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশ’তে গিয়ে ঠেকেছে। এছাড়া বাকি ৬ ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি ৩০-এর ঘরেও পৌঁছায়নি।

তিনবার উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে ২০ রানের কমে। আর দুইবার প্রথম উইকেট খোয়া গেছে ০ রানে। তার মানে বিষয়টা পানির মতো পরিষ্কার, ওপেনিং ভালো হলেই ব্যাটিংয়ের চিত্রটা এত করুণ হতো না।

এখন পর্যন্ত ধর্মশালা, পুনে, মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই আর কলকাতায় যেসব পিচে খেলেছে বাংলাদেশ; তার প্রায় সবকটিই ব্যাটিংবান্ধব।

এসব পিচে যারা বেশি রান করছেন, চার ও ছক্কার ফুলঝুরিতে প্রতিপক্ষ বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন, তার বড় অংশই হলো ওপেনার। রান তোলায় সবার উপরে থাকা প্রথম চার ব্যাটার কুইন্টন ডি কক, ডেভিড ওয়ার্নার, রাচিন রাবিন্দ্রা আর রোহিত শর্মা সবাই ওপেনার। যে দলের ওপেনাররা ভালো খেলছেন, সে দলের ব্যাটিং ভালো হচ্ছে।

বাংলাদেশই একমাত্র দল, যারা ব্যাটিং সমস্যায় জর্জরিত। ভারতের সাথে একমাত্র ম্যাচটি ছাড়া আর ভালো শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। ওপেনারদের ব্যর্থতায় ধুঁকছে পুরো ব্যাটিং বিভাগ। পরের দিকের ব্যাটাররা ইনিংসকে নতুন ভাবে সাজানোর কাজেও হয়েছেন চরম ব্যর্থ। আগেরবার সাকিব ওয়ানডাউনে নেমে রানের নহর বইয়ে দিয়েছিলেন। আর সে কারণে লিটন দাসসহ বাকিদের ভালো খেলার পথ খুলে গিয়েছিল।

তানজিদ তামিম আর লিটন দাসের ব্যর্থতায় এবার শুরুই হচ্ছে বিপর্যয় দিয়ে। বিশ্বকাপের আসরে প্রথমবার খেলতে যাওয়া তানজিদ তামিম গিয়েই পড়েছেন ফজলহক ফারুকি, রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, জাসপ্রিত বুমরাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, ট্রেন্ট বোল্টদের মতো বোলারদের তোপের মুখে। তাদের বল মোকাবেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই এই তরুণের।

তাদের কাকে কিভাবে সামলাবেন? কার বিপক্ষে শুরুতে রয়ে সয়ে খেললে, পরে সেট হয়ে খোলস ছেড়ে বের হয়ে ফ্রি খেলা যাবে, কাকে শুরুতে চড়াও হয়ে খেললে সাফল্যের দেখা মিলবে? তার কিছুই জানা নেই তানজিদ তামিমের। সে কারণে প্রায় ম্যাচেই তাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেই উইকেট দিয়ে আসতে দেখা গেছে।

অথচ বিশ্বমানের বোলিংয়ের বিপক্ষে কখন কী করতে হবে- তার প্রায় সবটাই জানা তামিম ইকবালের। বয়স ও ফিটনেসের কারণে হয়তো, রিফ্লেক্স কমেছে। ফুটওয়ার্কও হয়েছে দুর্বল।

যে কারণে ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় প্রতিপক্ষের বোলিংকে দুমড়েমুচড়ে দেওয়া তামিম শেষের দিকে খানিক স্লো হয়ে গেছেন। স্ট্রাইকরেটও গেছে কমে। তারপরও কোয়ালিটি বোলিং মোকাবিলায় ওপেনিংয়ে তামিমের চেয়ে বেটার অপশন আর নেই বাংলাদেশের। তার অভাব মেটাতে পারেননি তানজিদ তামিম। লিটন দাস নিজের মতো খেলতে পারলে হয়তো ওপেনিং সমস্যাটা এত প্রকট আকার ধারণ করতো না।

কিন্তু লিটনও সে অর্থে কিছুই করতে পারেন নি। দুই ওপেনারের দুর্বলতা ও ঘাটতি পুষিয়ে যেতো, যদি ওয়ানডাউন নাজমুল হোসেন শান্ত (৭ ইনিংসে ১৩১ , সর্বোচ্চ ৫৯*) আর চার নম্বরে খেলা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (৬ ম্যাচে ১০৪, সর্বোচ্চ ৪৩) ভালো খেলতেন।

কিন্তু তারা দুইজনও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতায় ওপেনিংয়ের সমস্যাটা আরও তীব্র হচ্ছে। পুরো ব্যাটিংই হয়ে পড়েছে এলোমেলো, অবিন্যস্ত।

ব্যাটিং সহায়ক পিচে ব্যাটারদের ব্যাট কথা না বললে বোলারদের আসলে কিছু করারও থাকে না। বাংলাদেশের বোলারদেরও তাই হয়েছে। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তারা লড়াকু পুঁজি পাচ্ছেন না। আবার উইকেট ব্যাটিংবান্ধব হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষকে কম রানে আটকে ফেলাও দায়।
তাই মূল দায়িত্বটা আসলে ছিল ব্যাটারদেরই। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা এই জায়গায় পুরোপুরি ব্যর্থ। আর সেই ব্যর্থতার ঘানি টানতে হচ্ছে পুরো দলকেই।

– আরিফুর রহমান বাবু

 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *